নিজস্ব প্রতিনিধি: পার্বত্য জেলা রাঙামাটি বাৎসরিক ১৪ হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন মাছের চাহিদা রয়েছে; তবে জেলায় বছরে ২০ হাজার ৩১৪ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে।
মৎস্য বিভাগের হিসাবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় চাহিদার চেয়ে মাছের উৎপাদন বেশি; মাছের কোনো ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ।
সোমবার (২৪ জুলাই) দুপুরে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৩ উপলক্ষে জেলায় মৎস্য চাষী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মিলনায়তনে অংশীজনদের সঙ্গে এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘পুরো রাঙামাটি জেলায় ৪১টি মৎস্য বাজার রয়েছে। জেলায় ২৪ হাজার ১২৮ জন নিবন্ধিত জেলে ও ৩ হাজার ৪২১ জন মৎস্য চাষী রয়েছেন। ১ হাজার ২২৭টি পুকুর এবং ১ হাজার ৯০টি ক্রিক আছে। কাপ্তাই হ্রদ, পুকুর ও ক্রিক মিলিয়ে আমাদের মৎস্য উৎপাদন চাহিদার চেয়ে অনেকাংশে বেশি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য জেলায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। এছাড়া কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন ঘোনায় মাছ চাষ করা গেলে জেলায় মৎস্য উৎপাদন আরও বাড়বে।’
সভায় জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) শ্রীবাস চন্দ্র চন্দের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল হাসান, জেলা মৎস্য অফিসের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, বাংলাদেশ নদী গবেষণা কেন্দ্র রাঙামাটি নদী উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা লিপন মিয়া, কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্রের মার্কেন্টিং অফিসার সোয়েব সালেহীন, মৎস্য ব্যবসায়ী উদয়ন বড়–য়াসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা ও মৎস্যজীবারা।
সভায় বক্তারা বলেন, রাঙামাটির বরকল ও বিলাইছড়িতে উপজেলা মৎস্য অফিস না থাকায় সেবা নিতে ভোগান্তি পান এই দুই উপজেলার মৎস্যজীবীরা। এ দুটি উপজেলায় কার্যালয় স্থাপনে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এছাড়া পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন বাড়লেও স্থানীয়রা বলছেন আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না, বাস্তব চিত্রও তাই বলছে। বিগত তিন-চার বছর আগেও বর্ষা মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে ভরপুর পানি থাকলেও এখন পানির সংকট রয়েছে। হ্রদের পানির উৎস, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব নাকি বৃষ্টিপাতের অভাবে পানির সংকট এসব নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
এছাড়া কাপ্তাই হ্রদে অভয়াশ্রম বৃদ্ধি ও বর্তমান অভয়াশ্রসমূহ নিয়ে গবেষণার দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।
এই সময় বক্তারা কাপ্তাই হ্রদে প্রাকৃতিক মৎস্য উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য চাষের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, উপজেলা পর্যায়ে মৎস্যচাষীদের মৎস্যচাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, মাঠ পর্যায়ে মৎস্য চাষীদের পুকুর পরিদর্শন ও পরামর্শসেবা প্রদান, পোনা অবমুক্তকরণ, রাজস্ব ও প্রকল্পের আওতায় চাষী ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে মৎস্যবিষয়ক প্রশিক্ষণ কাযক্রম বাস্তবায়ন, মৎস্য প্রদর্শনী খামার স্থাপন, মৎস্য আইনবিষয়ক সচেতনতামূলক সভা, নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার ও মাছ বিক্রি বন্ধে কাজ করছে মৎস্য বিভাগ।
এছাড়া ব্যাংক ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে চাষীদের সহায়তা প্রদান, পাহাড়ি পতিত এলাকায় ক্রিকে বাঁধ দিয়ে মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ, কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধকালীন মৌসুমে জেলেদের জন্য প্রাপ্ত ভিজিএফ চাল বিতরণ ও নিবন্ধিত জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিতে এআইজিএ সহযোগিতা প্রদান করেছে মৎস্য বিভাগ।
সভা থেকে জানানো হয়, আগামীকাল মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে কাপ্তাই হ্রদে মাছের পোনা অবমুক্ত ও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ১০টায় রাঙামাটি বিএফডিসি অবতরণ ঘাটে রাঙামাটির সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন। এরপর জেলা শহরের হ্যাপির মোড় থেকে জেলা পরিষদ চত্বর পর্যন্ত র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। র্যালি পরবর্তীতে আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করবেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী।